বিশ্বের কয়েকটি দেশে সংক্রামক ব্যাধি মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়ায় বাংলাদেশও সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। প্রস্তুত করা হচ্ছে সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতাল। সেই সাথে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোয় বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশের কোথাও এই রোগের উপসর্গ পাওয়া গেলে আইইডিসিআরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, এখন গ্লোবাল ওয়ার্ল্ড। মানুষ এক জায়গা থেকে অল্প সময়ে অনেক বেশি চলাচল করতে পারে, আগে এত বেশি চলাচল ছিল না। সুতরাং রোগটি কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমরা কতটুকু সতর্ক। আমরা এজন্য নির্দেশনাগুলো দিয়েছি এবং আমরা আমাদের মতো করে যা প্রস্ততি রাখা দরকার, সেটা রেখেছি। সুতরাং উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
বাংলাদেশ কী ধরনের সতর্কতা নিচ্ছে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, এটা সংক্রামক রোগ। এ কারণে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। প্রাথমিকভাবে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হয়েছে। কোনো রোগী পাওয়া গেলে সেখানে আইসোলেশনে রাখা হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, বিমানবন্দরের মেডিক্যাল অফিসারদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কারো মধ্যে উপসর্গ থাকলে বা সন্দেহ হলে তাকে চিহ্নিত করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতে বলা হয়েছে।
সাধারণত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। সর্বপ্রথম বানরের দেহে শনাক্ত হওয়া এ রোগটি ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় এবং এর আগে আফ্রিকার বাইরে দেখা যায়নি। ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য, স্পেন, পতুর্গাল, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও সুইডেন এবং যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া এ পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের রোগী পাওয়ার কথা জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, মাথাব্যথা, হাড়ের জোড়া ও মাংসপেশিতে ব্যথা এবং অবসাদ। জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের অন্যান্য জায়গায়। এই গুটির জন্য রোগীর দেহে খুব চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। জলবসন্তেরই মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে সেই ক্ষতচিহ্ন রয়ে যায়। রোগ দেখা দেওয়ার ১৪ থেকে ২১ দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। সংক্রমিত রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে এই ভাইরাস ছড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের ক্ষত থেকে এবং নাক, মুখ ও চোখের ভেতর দিয়ে এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বানর, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, এমনকি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত বিছানাপত্র থেকেও এই ভাইরাস অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। যেহেতু এ রোগ সাধারণভাবে প্রাণঘাতী নয়, তাই এটি নিয়ে উদ্বেগের তেমন কারণ নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।