ক্রিকেট ক্যারিয়ার প্রায় ১৫ বছরের। যেখানে প্রাপ্তি রয়েছে অনেক। কিন্তু অপ্রাপ্তির খাতায়ও যে যোগ হয়েছে অনেক! টাইগার উইকেটরক্ষক ব্যাটার মুশফিকুর রহিম তার ক্যারিয়ারের শেষের দিকে এসেই অপ্রাপ্তির খাতা যেনো বেশি ভারী করছেন।
মুশফিককে বলা হয় বাংলাদেশ দলের ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’। মানে, যার উপরে ভরসা রাখা যায়। কিন্তু সেই ক্রিকেটারই যখন তার খামখেয়ালিপানা বা একই ধরণের কিছু ভুলে দলকে বার বার বিপদে ফেলে দেন, তখন তাকে দেওয়া এই তকমা কি সত্যি শোভা পায়?
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে তিন বলে দুই রানের ম্যাচে ভুল শট সিলেকশনে দলকে বিপদে ফেলে দেওয়া কিংবা ইংল্যান্ডে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কেন উইলিয়ামসনের রান আউট মিস করে দলকে বিশ্বকাপের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ করে দেওয়ার মতো বড় বড় ভুলগুলো যে মুশফিক প্রতিনিয়ত ঘটাচ্ছেন। শুধু মাঠেই নিজের ভুলে থামছেন না এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের বিতর্কিত মন্তব্য আলোচনারও সৃষ্টি করছেন।
মুশফিকের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার মোটেও ‘ডিপেন্ডেবল’ তকমা পাওয়া ব্যাটসম্যানের মতো নয়। ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত মোট ১০১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন মুশফিক যেখানে রান করেছেন ১৫শ’ এরও কম। অ্যাভারেজ ১৯ এর ঘরে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেই স্ট্রাইকরেট, সেটাও ১১৫। বর্তমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যা অবশ্যই দৃষ্টিকটুও বটে।
এরপরও মুশফিক টি-টোয়েন্টি খেলছেন। গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনে তার ভূমিকা, ক্যাচ মিস, রান আউট হাতছাড়া করা নিয়ে নানা সমালোচনা থাকলেও সে এই দায়িত্বগুলো নিয়মিতই পালন করে যাচ্ছেন। যার খেসারত গুনতে হচ্ছে দলকে। আর তার সবশেষ সংযোজন, এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার দুইটি ভুল। যেই ভুলে এশিয়া কাপ থেকেই ছিটকে পড়তে হলো বাংলাদেশকে।
বৃহস্পতিবার ডু-অর ডাই ম্যাচে বাংলাদেশকে দুই উইকেটের ব্যবধানে পরাজিত করেছে লঙ্কানরা। যেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার হয়ে ব্যাট হাতে সবচেয়ে বেশি রান তুলেছেন কুশাল মেন্ডিস। এই ব্যাটারের ব্যাট থেকেই এসেছে ৬০ রান। কিন্তু মেন্ডিস তার এই ইনিংসের জন্য সবচেয়ে বড় ধন্যবাদটা দিতেই পারেন মুশফিককে। কারণ দুই অঙ্কের ঘরে পৌছানোর আগেই মুশফিকের কাছে জীবন পেয়েছিলেন তিনি।
তাসকিনের বল ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে চলে গেলে ক্যাচটি তালুবন্দি করতে পারেননি তিনি। ইনিংসের শুরুতেই জীবন পাওয়া মেন্ডিস মুশফিকের ভুলে আরও একবার বেঁচে যান। এবার বোলার ছিলেন অবশ্য এবাদত।
তার বাউন্সার ব্যাটের কানায় লেগে সরাসরি চলে যায় মুশফিকের হাতে। কিন্তু ক্যাচের আপিল করলেও, আম্পায়ার সাড়া না দেওয়ায় রিভিউ নেননি মুশফিক। বলটি যে ব্যাট ছুঁয়ে এসেছে, সেটা বুঝতেই পারেননি তিনি। ফলে মুশফিকের আরও এক ভুলে দ্বিতীয়বারের মতো বেঁচে যান কুশাল মেন্ডিস। এরপর মেন্ডিস আরও কিছু জীবন পেয়েছেন। মোস্তাফিজের বলে আউট হওয়ার আগে প্রায় দলের জয়ের ভীত গড়ে দিয়েছিলেন এই ব্যাটার। তিনি যখন প্যাভলিয়নে ফিরছেন তখন লঙ্কানরা বেশ শক্ত অবস্থানই তৈরি করে ফেলেছে। পরে ম্যাচটিও নিজেদের করে নিয়েছে অর্থনীতিতে ভয়ানক মন্দায় থাকা এই দেশটি।
একজন দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হয়েও একই ভুল বার বার ঘটিয়ে দলকে বিপদে ফেলে দেওয়ার দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন কি মুশফিক?