খালেদ মাহমুদ সুজন মাঠের মানুষ। ক্রিকেট মাঠ, উইকেটের সঙ্গেই তার যত সখ্য। জাতীয় দল, বয়সভিত্তিক জাতীয় দল, ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনী ও বিপিএলের অন্যতম বড় স্পন্সর বেক্সিমকোর সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। মাঝ পঞ্চাশের খুব কাছে দাঁড়িয়ে এখনও মাঠ, ক্রিকেটাররাই তার সবচেয়ে আপন।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে তার পরিচয় পরিচালক, গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটি চেয়ারম্যান ও জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর। মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আকরাম খান ও আমিনুল ইসলাম বুলবুলের মতো নব্বইয়ের দশক বা বর্তমান শতাব্দীর শীর্ষ তারকা হিসেবে পরিগণিত না হলেও ক্রিকেটার সুজনও ফেলনা নন।
নব্বই দশকের পুরো সময় ও বর্তমান শতাব্দীর প্রথম ভাগে দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে ছিলেন সমাদৃত। পেস বোলার কাম মিডল অর্ডার হিসেবে সাহস, উদ্যম ও লড়িয়ে মানসিকতারও বড় প্রতীক হিসেবে ধরা হতো খালেদ মাহমুদ সুজনকে।
তবে সুনাম-সুখ্যাতির বাইরে তাকে নিয়েও আছে সমালোচনা। বোর্ডে বেশি পদে অধিষ্টিত থাকা ও জাতীয় দলের ম্যানেজমেন্টের অংশ হয়ে সুজন নিন্দিত ও সমালোচিত। বিদেশি হাই প্রোফাইল কোচ থাকার পরেও তিনি কেন জাতীয় দলের ডিরেক্টর? সেখানে তার কাজ কী? কতটা দক্ষতার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন? তা নিয়েও আছে প্রশ্ন।
সমালোচকদের পাশাপাশি এবার খালেদ মাহমুদ সুজনের সমালোচনায় নাম লিখিয়েছেন তারই খেলোয়াড়ি জীবনের সঙ্গী সেই যুব দল (অনূর্ধ্ব ১৮-১৯) থেকে একত্রে খেলা আমিনুল ইসলাম বুলবুল। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বুলবুল সুজনের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
আজ সোমবার বিকেলে বিসিবিতে মিডিয়ার সাথে আলাপে সুজনও পাল্টা জবাব দিয়েছেন। তিনিও বুলবুলের কথার কড়া জবাব দিয়েছেন। বুলবুলের নাম উল্লেখ না করে সুজন এক পর্যায়ে বলে ওঠেন, ‘উনার (বুলবুল ভাইয়ের) কী যোগ্যতা আছে আমার ব্যাপারে কথা বলার, সেটাই আমি জানি না আসলে।’
উল্টো বুলবুলের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন সুজন, ‘উনার যোগ্যতা নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। খেলা ছাড়ার পর থেকে আমি ক্রিকেটের সঙ্গেই আছি। ন্যুনতম একটা বেতনে সাড়ে ৪ বছর বিসিবিতে কাজ করেছি। আপনাদের মাধ্যমেই সবসময় শুনি, উনি বাংলাদেশে কাজ করতে চান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার তো এগুলো সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতা। আমি নিজেই উনাকে প্রস্তাব দিয়েছি বাংলাদেশে কাজ করতে। উনি কোনোদিনই আমাকে জানাননি যে কাজ করতে চান। উনি প্রতিবারই এরকম হাইপ তোলেন। কিন্তু আমাকে বলেন, উনি কোন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ের সঙ্গে কাজ করেছেন আসলে। উনি আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের সঙ্গে একবারই কাজ করেছেন, যেবার আবাহনীর সঙ্গে কাজ করেছেন।’
‘এছাড়া উনি চীন, ব্যাংকক, ফিলিপাইন… ওখানে অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৫ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কাজ করেছেন। ওখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোথায় পেলেন। সুতরাং ওনার যোগ্যতাটা কোথায়? আমি অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ করেছি। বাংলাদেশের হেড কোচও ছিলাম।’
এসময় নিজের যোগ্যতা কী, কোন পরিচয়ে তিনি জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর? তার জবাবও দিয়েছেন সুজন। তার ব্যাখ্যা, ‘আমার যোগ্যতা… আমি বিসিবিতে আছি। আমি তো নির্বাচিত পরিচালক। নির্বাচন করে জিতে বোর্ডে এসেছি। ওখান থেকে আমাদের টিম ডিরেক্টর করা হয়েছে। বোর্ডের প্রেসিডেন্ট আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, উনি কেনো আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন বলতে পারব না। এটা তো আমি চেয়ে নেইনি।’
তার একসময়ের ক্লাব ক্রিকেট (মোহামেডানের বছর তিনেক একসঙ্গে খেলেছেন) ও জাতীয় দলের সঙ্গী বুলবুলের প্রতি ইঙ্গিত করে সুজন আরও বলেন, ‘আমি আর কিছু নিয়ে বলতে চাই না। একটা মানুষকে নিয়ে যখন বলবো, তখন নিজের যোগ্যতা নিয়েও চিন্তা করা উচিত যে আমি কতটুকু পারি না পারি। কে ভালো কে খারাপ এটা বিচার করার অধিকার তার যেমন নেই, আমারও নেই। তাই এটা নিয়ে আমি বলতেও চাই না। উনি বড়, উনাকে সেই শ্রদ্ধাটা আমি সবসময় করি, করবো।’
সুজনের শেষ কথা, ‘উনি যেভাবে কথা বলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে, উনি আসুক, আমাদের সঙ্গে বসুক; বাংলাদেশ দলকে বদলানোর কোনো পরিকল্পনা থাকলে আমাদেরকে দিক, আমরাও যেনো তেমন পরিকল্পনা করতে পারি।’