বাঙলা কলেজের এক ছাত্রীকে জিম্মি করে তিন হাজার টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সরকারি তিতুমীর কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম ইমাম হাসান শুভ। তিনি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের উপ-মানব উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও বনানী থানা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জন্মদিন ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে ওই মেয়েকে প্রপোজ করেছি। মাঠের মধ্যে জাস্ট এক মিনিট কথা বলেছি।আর ওই মেয়েটা আমার বাইকে ইট মেরেছে।
অপরদিকে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী সরকারি বাঙলা কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে তিনি তিতুমীর কলেজে গিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে তিতুমীর কলেজের ভেতরে এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ছাত্রীকে হয়রানির এবং টাকা হাতিয়ে নেওয়ার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জানান, গত বৃহস্পতিবার সরকারি তিতুমীর কলেজে ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে কিছুক্ষণ কলেজ মাঠে অবস্থান করেছিলাম। এসময় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান শুভ মাঠের মধ্যে অকারণেই আমাদের উত্ত্যক্ত করে। সে বাজে ভাষায় টিজ করতে থাকে, একাধিকবার প্রেমের প্রস্তাব দেয়। হাত ও মুখ দিয়ে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করতে থাকে। আমরা সেখান থেকে সরে গেলেও তারা বেশ কয়েকজন আমাদের পিছু নিয়ে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। একপর্যায়ে আমি একটা ছোট ইটের টুকরো তাদের বাইকের দিকে ছুড়ে মারি। এসময় সেখানে আমার বিভাগের এক বন্ধু এলে তারা আমার বন্ধুকে মারধর করে। বিনা কারণে কেন মারছেন জিজ্ঞেসে করলে তারা বলে, আপনি অপরাধ করেছেন তাই আমরা আপনার বন্ধুকে মারছি। মারা থামবে যদি বাইক ভাঙ্গার ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেন।
হয়রানির শিকার ওই শিক্ষার্থী আরো অভিযোগ করেন, বাইকের কোনো ক্ষতি না হলেও একপর্যায়ে তারা আমার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। দিতে রাজি না হওয়ায় তারা বেশ কয়েকজন মিলে আমাদের হেনস্তা শুরু করে। এসময় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। টাকা না দিলে আমার সহপাঠীদের আবার মারধর করবে বলে জানায় শুভ। একপর্যায়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে বাসায় ফিরতে হয়েছে। হয়রানি ও ইভটিজিংয়ের ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
তবে টাকা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন ছাত্রলীগ নেতা ইমাম হাসান শুভ। তিনি বলেন, আমি টাকা দাবি করিনি। শুধু বলেছি, শোরুমে গিয়ে বাইকের যে ক্ষতি হয়েছে ঠিক করিয়ে দাও। পরে বন্ধুরা ধরে গাড়ি ভাঙ্গার জরিমানা নিয়েছে। তবে অভিযুক্ত ওই নেতা কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন না বলে জানিয়েছেন তিুতমীর কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়ল। তিনি বলেন, তিনি আমাদের কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন না। তিনি যে পদ দাবি করেন সেটাও আমরা নিশ্চিত নই। আর শুনেছি বিষয়টা সমাধান হয়ে গেছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, বিষয়টা আমি শুনেছি। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ঘটনাটি আমিও শুনেছি। বৃহস্পতিবার ছুটিতে ছিলাম। রোববার ক্যাম্পাসে গিয়ে বিষয়টি দেখব। কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। ছেলেটা যা করেছে অবশ্যই অন্যায় করেছে। তার বিরুদ্ধে কলেজ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
